অনেকেই মনে করেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাক একই ধরনের সমস্যা। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এমনকি শিক্ষিত মানুষের মাঝেও এ বিভ্রান্তি দেখা যায়। ফলে স্ট্রোক হলে অনেকে রোগীকে সরাসরি হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যান। এতে যেমন সময় ও অর্থ নষ্ট হয়, তেমনি চিকিৎসা শুরুতে দেরি হওয়ার কারণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে—স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগ আর হার্ট অ্যাটাক হৃৎপিণ্ডের রোগ; দুটি একেবারেই আলাদা।কীভাবে স্ট্রোক হয়
যদি মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা ফেটে যায়, তখন স্ট্রোক হয়। তবে এটি কোনো আঘাতের কারণে ঘটে না। স্ট্রোকের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়, আর বাকি অংশ হয় রক্তনালি ফেটে যাওয়ার কারণে।
স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ
উচ্চ রক্তচাপ
ডায়াবেটিস
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি বাড়ে

ধূমপান
হৃদরোগ
মস্তিষ্কের রক্তনালি সরু হয়ে যাওয়া
অ্যালকোহল সেবন
নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব
রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের স্ট্রোক কিছুটা কম হয়।
লক্ষণ
স্ট্রোকের সময় মস্তিষ্কের কোন অংশ আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—
শরীরের এক পাশ দুর্বল হয়ে যাওয়া বা কাজ না করা
কথা বলতে অসুবিধা
গিলতে সমস্যা
চোখে সমস্যা বা দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া
প্রস্রাবে অসুবিধা
প্রস্রাবে অসুবিধা
মাথা ঘোরা
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা
সব রোগীর ক্ষেত্রে একই রকম উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে।
পরীক্ষা ও চিকিৎসা
স্ট্রোক সন্দেহ হলে চিকিৎসক প্রথমে শারীরিক পরীক্ষা করেন। সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হয়। ঝুঁকির কারণ বোঝার জন্যও বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়।
চিকিৎসার শুরুতে রোগীর পালস, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে কি না তা দেখা জরুরি। সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। রোগী খেতে না পারলে নাকের নলের মাধ্যমে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়। প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর রোগীর শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত, যাতে পিঠে ঘা না হয়। মলমূত্রের স্বাভাবিকতা নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধ দেওয়া হয়।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা
স্ট্রোক প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
ধূমপান পরিহার করা
কোলেস্টেরলমুক্ত খাবার খাওয়া
নিয়মিত ব্যায়াম করা
হৃদরোগের চিকিৎসা নেওয়া
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা