সর্বশেষঃ

নারীদের স্তন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে ৭টি উপায় : | শীতে নাক বন্ধ, চোখ চুলকায়? সাধারণ সর্দি নয়, হতে পারে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস | বছরে হৃদরোগ নিয়ে জন্মায় ৭৩ হাজার শিশু, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট মাত্র ৫৩ | পা ও পায়ের পাতায় যে ৫টি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন আপনার কিডনি বিপদে! | কিডনির সমস্যায় শরীরে দেখা দেয় যেসব লক্ষণ | নারীদের স্তন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে ৭টি উপায় : | শীতে নাক বন্ধ, চোখ চুলকায়? সাধারণ সর্দি নয়, হতে পারে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস | বছরে হৃদরোগ নিয়ে জন্মায় ৭৩ হাজার শিশু, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট মাত্র ৫৩ | পা ও পায়ের পাতায় যে ৫টি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন আপনার কিডনি বিপদে! | কিডনির সমস্যায় শরীরে দেখা দেয় যেসব লক্ষণ |

♦♦মিলাদ পড়া জায়েজ কি না?
মিলাদ পড়া (যাকে অনেকে “মিলাদ মাহফিল” বা “মাওলিদুন্নবী” উদযাপন বলেন) জায়েজ কি না — এ বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের আলোকপাত অনুযায়ী তিনটি শ্রেণিতে আলেমদের মতামত পাওয়া যায়:
🔶 ১. মিলাদ পড়া জায়েজ ও সওয়াবের কাজ — (সমর্থনকারী মত)
📌 যুক্তি:
এতে রাসূল ﷺ এর জন্ম স্মরণ, তাঁর সিরাত (জীবনী) আলোচনা, দোয়া, কুরআন তেলাওয়াত, এবং নাতে রাসূল পাঠ হয়।
যদি শিরক, বিদআত, গানবাজনা, বাড়াবাড়ি না থাকে, তবে এটি সুন্দর ও উৎসাহব্যঞ্জক ইবাদত।
✅ সমর্থনকারী বিখ্যাত আলেম:
আলেম মন্তব্য
ইমাম সুয়ূতি (রহ.) মিলাদ শরিয়তসম্মত, যদি হারাম কিছু না থাকে
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) সিরাত পাঠ, দোয়া — সওয়াবের কাজ
মুফতি তাকী উসমানী সীমা রক্ষা করলে এটা ভাল আমল
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকারিভাবে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করে থাকে
🔶 ২. মিলাদ বিদআতে হাসানাহ (ভালো বিদআত) — (সতর্ক সমর্থন)
📌 যুক্তি:
রাসূল ﷺ নিজে করেননি, সাহাবারা করেননি — তাই এটি নব আমল।
তবে যদি তা ধর্মীয় বিধান হিসেবে না হয়, বরং ভালোবাসার প্রকাশ ও স্মরণ হয় — তা নিন্দনীয় নয়।
⚠️ এমন মতের আলেম:
আলেম মন্তব্য
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) মিলাদ শরিয়তবিরোধী না হলে তা বিদআতে হাসানাহ
হানাফি মাজহাবের অনেক আলেম শর্তসাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য
🔴 ৩. মিলাদ বিদআত (নব সংযোজিত অনুচিত আমল) — (প্রতিবাদী মত)
📌 যুক্তি:
রাসূল ﷺ, সাহাবা, তাবেয়িন কেউ এমন কিছু করেননি।
নবীজির জন্মদিনকে ইবাদতের উৎসব বানানো বিদআত, এমনকি কখনো শিরক পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
❌ বিরোধী আলেম:
আলেম মন্তব্য
ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) এটি বিদআত
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব শিরকি পথে নিয়ে যেতে পারে
দারুল উলুম দেওবন্দ (কঠোর ঘরানা) মিলাদ শরিয়তে নেই, বিদআত
✅ সংক্ষিপ্ত ফিকহি ফয়সালা (উপসংহার):
মিলাদের ধরন হুকুম
কুরআন তেলাওয়াত, সিরাত পাঠ, দোয়া, গানবাজনা ছাড়া ✔️ জায়েজ ও সওয়াবের কাজ
কবর পূজা, নাচ-গান, শিরকি কবিতা ❌ হারাম / বিদআত / গুনাহ
ইবাদত মনে করে বাধ্যতামূলক করা ⚠️ বর্জনীয় / নাজায়েজ
📌 আপনার জন্য সহজ সিদ্ধান্ত:
আপনি যদি রাসূল ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা থেকে, সিরাত ও কুরআন পাঠ, দোয়া এবং হালাল পরিবেশে মিলাদ পড়েন —
➡️ তাহলে বহু আলেমের মতে এটা জায়েজ ও ফজিলতের
♦♦♦মিলাদ পড়া সম্পর্কে মাযহাব ভিত্তিক আলোচনা
“মিলাদ পড়া” বা “মাওলিদ/মিলাদুন্নবী পালন” সম্পর্কে ইসলামী মাযহাবসমূহের (চার মাযহাব: হানাফি, শাফি, মালিকি, হাম্বলি) আলোকপাত করলে দেখা যায়, মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ একে বৈধ মনে করেন নির্দিষ্ট শর্তে, আবার কেউ একে বিদআত বা অনুচিত মনে করেন।
🔹 প্রথমে বুঝি — মিলাদ কী?
“মিলাদ” (مِيلَاد) শব্দের অর্থ জন্ম।
ইসলামী প্রেক্ষাপটে “মিলাদুন্নবী” বলতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর জীবনী, গুণাবলী, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি পাঠ করা বোঝায়।
✅ হানাফি মাযহাব অনুযায়ী:
🔸 মিলাদ উদযাপন বিদআত নয়, যদি কিছু শর্ত মানা হয়:
অনেক হানাফি আলেম (বিশেষ করে দেওবন্দি ধারার বাইরে) মনে করেন:
যদি মিলাদে শুধু রাসূল ﷺ এর জন্ম, জীবন, সিরাত, গুণাবলী বর্ণনা করা হয়, কোরআন ও দোয়া হয়, এবং শিরক-বিদআত, গান-বাজনা, অন্ধবিশ্বাস না থাকে — তাহলে এটি “নেক আমল”।
📘 মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.):
“যদি মিলাদ শরীয়ত পরিপন্থী কিছুমুক্ত হয়, তাহলে সেটি বিদআত নয়, বরং স্মরণ ও ভালোবাসার একটি বৈধ উপায়।”
⚠️ কিন্তু দেওবন্দি/সালাফি ঘরানার কিছু আলেম মনে করেন:
মিলাদ শরিয়তে প্রমাণিত নয়, সাহাবারা কখনো করেননি — তাই তা বিদআতে হাসানা হলেও শরিয়তের নির্দিষ্ট ইবাদতের জায়গায় আনলে নাজায়েজ হতে পারে।
✅ শাফি মাযহাব অনুযায়ী:
🔹 শাফি আলেমগণের বড় অংশ মিলাদকে ভালো কাজ বা “বিদআতে হাসানা” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
📘 ইমাম সুয়ূতি (রহ.):
“মিলাদ পালন করা, যদি রাসূলের জীবনী পাঠ, দোয়া, কোরআন ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে এটি ভালো কাজ।”
📘 ইমাম ইবনে হাজার আল-হাইতামী (শাফি ফকীহ):
“মিলাদুন্নবী উদযাপন নেক কাজ, যদি তাতে হারাম কিছু না থাকে।”
⚠️ মালিকি মাযহাব:
মালিকি মাজহাবে মিলাদুন্নবী সাধারণভাবে প্রচলিত নয়, তবে কিছু আলেম শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছেন।
তবে অনেক মালিকি আলেম এটিকে বিদআত হিসেবে পরিহার করতে বলেন, কারণ তারা বলেন:
“সাহাবা ও তাবেঈনরা কখনো এমন কোনো অনুষ্ঠান করেননি।”
❌ হাম্বলি মাযহাব এবং সালাফি চিন্তাধারা:
ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনে কায়্যিম, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব প্রমুখ মিলাদ উদযাপনকে বিদআত বলেন।
📘 ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) বলেন:
“মিলাদ উদযাপন নবউম্মতের কাজ। সাহাবা ও তাবেয়িন এর কোনো দৃষ্টান্ত রাখেননি।”
➡️ তবে তিনি বলেন,
“যদি কেউ মিলাদে কেবল কুরআন তেলাওয়াত, রাসূলের গুণাবলি বর্ণনা, দোয়া করে — তাহলে তার নিয়ত ভালো হলে তা গুনাহের পর্যায়ে না যেতে পারে।”
📌 সারসংক্ষেপ (তালিকা আকারে):
মাজহাবমিলাদ সম্পর্কে অবস্থানব্যাখ্যাহানাফি✔️ শর্তসাপেক্ষে জায়েজ (অনেকে) / ❌ বিদআত (দেওবন্দি ঘরানা)যদি হারাম, শিরক, অন্ধ বিশ্বাস না থাকেশাফি✔️ বিদআতে হাসানাঅনেক আলেম সমর্থন করেছেনমালিকি⚠️ সতর্ককেউ জায়েজ বলেছেন, কেউ বিদআতহাম্বলি / সালাফি❌ বিদআতসাহাবাদের আমল নয় বলে
✅ মিলাদ যদি নিচের মতো হয়, তাহলে অনেক মাজহাবের আলেম এটিকে ভালো আমল হিসেবে গ্রহণ করেন:
কুরআন তেলাওয়াত
রাসূল ﷺ এর সিরাত পাঠ
দোয়া
জিকির
খাদ্য বিতরণ (হালাল হলে)
❌ কিন্তু নিচের বিষয় থাকলে তা বিদআত বা হারাম হয়ে যেতে পারে:
শিরকি কবিতা বা গান
কবর বা মাজার কেন্দ্রিক মিলাদ
অন্ধবিশ্বাস বা পূজা-মত আচরণ
গান-বাজনা, নারী-পুরুষ মিশ্রতা
🤲 উপসংহার:
আপনি যদি রাসূল ﷺ-এর জীবনী স্মরণ, তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ এবং ইসলাম প্রচারের জন্য সুস্থ ও শরীয়তসম্মতভাবে মিলাদ পড়েন — তাহলে এটি অনেক আলেমের মতে নেক আমল ও অনুমোদিত।
♦♦♦আলেমদের মতামত
নিচে বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমদের মতামতসহ ইসলামী বিশ্বের স্বীকৃত স্কলারদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো — “মিলাদুন্নবী পড়া/পালন করা জায়েজ কি না” এ বিষয়ে:
✅ মিলাদুন্নবী জায়েজ — সমর্থনকারী আলেমদের মতামত:
1. 🟢 ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (রহ.) – বিখ্যাত শাফি আলেম
“আমার মতে রাসূল ﷺ-এর মিলাদ শরীয়তের দৃষ্টিতে সুন্নত না হলেও বিদআতে হাসানাহ (ভালো বিদআত)। যদি তাতে গুনাহের কিছু না থাকে — তবে এটি সওয়াবের কাজ।”
📘 রেফারেন্স: হুসনুল মাকসিদ ফি আমলিল মাওলিদ
2. 🟢 ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) – বিখ্যাত মুহাদ্দিস
“মিলাদুন্নবী এমন একটি আমল যা পরে চালু হয়েছে, তবে এতে কুরআন তিলাওয়াত, রাসূলের গুণাবলি বর্ণনা, দোয়া থাকলে তা সওয়াবের কাজ। যদি তা হারাম বা অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকে।”
3. 🟢 মুফতি আমিমুল ইহসান (বাংলাদেশ) – চট্টগ্রাম দারুল উলুম
“মিলাদ শরীয়তের মধ্যে একটি ভালো প্রচলন, যদি তা সীমার মধ্যে থাকে এবং শিরক/বিদআত/গানবাজনা থেকে মুক্ত থাকে।”
4. 🟢 মাওলানা জিল্লুর রহমান দারুল উলুম হাটহাজারী (রহ.)
“রাসূল ﷺ-এর জন্মদিন স্মরণ, তাঁর জীবনী আলোচনা, দোয়া করা — এসব শরীয়তসিদ্ধ। গানবাজনা বা বিদআত যদি না থাকে, তবে মিলাদ মানা উচিত।”
5. 🟢 মুফতি তাকী উসমানী (পাকিস্তান)
“মিলাদুন্নবী উদযাপন করার মাধ্যমে যদি রাসূল ﷺ-এর স্মৃতি ও সুন্নতের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, তবে তা বিদআত হিসেবে নয় বরং উৎসাহব্যঞ্জক আমল হিসেবে গণ্য হবে — যদি তা সীমা না ছাড়ায়।”
❌ মিলাদুন্নবী বিদআত — বিরোধী আলেমদের মতামত:
1. 🔴 ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) – হাম্বলি মাজহাব
“মিলাদুন্নবী সাহাবিদের আমল ছিল না। নবীর জন্মদিন পালন ইবাদত মনে করে করা হলে তা বিদআত।”
2. 🔴 মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) – সালাফি আন্দোলনের প্রবর্তক
“নবী ﷺ এর জন্মদিন উদযাপন করা শিরক ও বিদআতের দ্বার খুলে দেয়। এটি ইসলামে অনুমোদিত নয়।”
3. 🔴 দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারত) – হানাফি (কঠোর ঘরানা)
“নবীর জন্মদিন পালন করা ইসলামি শরিয়তের মধ্যে নয়। সাহাবা, তাবেঈন, ইমামগণ কখনো করেননি। তাই মিলাদ উদযাপন বিদআত।”
📘 তবে দেওবন্দি আলেমগণ মিলাদে কেবল সিরাত পাঠ, কুরআন পাঠ ও দোয়া বৈধ মনে করেন, যদি তা “রসম-রেওয়াজ” বা “ইবাদত মনে করে” না করা হয়।
📌 সারাংশ:
আলেমের নামঅবস্থানমন্তব্যইমাম সুয়ূতি, ইবনে হাজার✔️ সমর্থনশর্ত সাপেক্ষেতাকী উসমানী, আমিমুল ইহসান✔️ সমর্থনগানবাজনা, শিরক ছাড়াইবনে তাইমিয়্যাহ, সালাফি❌ বিরোধিতাবিদআতদারুল উলুম দেওবন্দ⚠️ সতর্কতাশুধু সিরাত পাঠ বৈধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *