
“পা ধরে সালাম করা”কে বিদআত বা হারাম বলে গণ্য করা হয়েছে।
পা ধরে সালাম করা বা কারো পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা বিষয়ে ইসলাম একটি পরিস্কার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। নিচে কুরআন, হাদীস এবং আলেমদের মতামতের আলোকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
ইসলামে সালামের প্রকৃত রীতি হলো:
“السلام عليكم ورحمة الله وبركاته” (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)
এর উত্তরে বলতে হয়:
“وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته” (ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)
এটি মুখের মাধ্যমে বলা সুন্নাত।
হাদীস অনুযায়ী:
রাসূল (সা.) এর যুগে কেউ কাউকে সম্মান জানাতে তাঁর পা ধরতেন না। বরং তিনি এমন আচরণ নিরুৎসাহিত করেছেন।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
“তোমরা তোমাদের মাঝে রুকু’র মতো মাথা নিচু করে একে অপরকে সালাম করো না।”
— (আবু দাউদ, হাদীস: ৫২৩১)
ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন:
“পায়ে পড়ে সালাম করা বা পা ছুঁয়ে সালাম করা আদব ও ভদ্রতার নামে জায়েয নয়। এটি অহংকার বাড়ায় এবং ইসলামী আদবের পরিপন্থী।”
দারুল উলূম দেওবন্দ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ অনেক বড় বড় ফতোয়া বিভাগ বলেছে:
পা ধরে সালাম করা ইসলামী রীতির পরিপন্থী। এটি হিন্দু সংস্কৃতির অনুকরণ। এটি পরিহার করা উচিত।
পিতা-মাতা, উস্তাদ বা বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাত চুমু খাওয়া বা হাত ধরে সালাম করা কিছুটা সীমিতভাবে কিছু আলেম বৈধ বলেছেন — তবে তা নিয়মিত না করা এবং অতি ভক্তিতে ভেসে না যাওয়া শর্তে।
ইসলামী রীতিতে শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়:
সালাম দিয়ে
উত্তম ব্যবহার করে
দোআ করে
কথা ও আচরণে নম্রতা বজায় রেখে
পা ধরে সালাম করা ইসলামে বৈধ নয়।
এটি অন্য ধর্ম বা সংস্কৃতির অনুকরণ, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।
সালামের সঠিক রীতি মুখে বলাই সুন্নাত ও প্রিয়।
পা ধরে সালাম করা সম্পর্কে চার মাযহাব—হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, ও হাম্বলি—এর মূলনীতি অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে একটি স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে, যদিও প্রত্যক্ষভাবে “পা ধরে সালাম” নিয়ে চার মাযহাবে বিস্তারিত আলোচনা খুব কম পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের মূল কাকলীন নীতির আলোকে এর হুকুম নির্ধারণ করা যায়।
হানাফি মাজহাবে, ইসলামি সালামের আদব ও আদর্শ অনুযায়ী মুখে সালাম করা ও সম্মান প্রদর্শনের ইসলামী রীতিই প্রাধান্য পায়।
পা ধরে সালাম করা বিদআত ও ইসলাম-বিরোধী সংস্কৃতি বলেই বিবেচিত।
বিশেষ করে, এটি হিন্দু সংস্কৃতির অনুকরণ (তৌজিম বা প্রণাম) হওয়ায় তা হারাম বা নাজায়েয হতে পারে।
“পায়ে ধরে সালাম করা ইসলামি রীতিনীতির পরিপন্থী এবং এটি থেকে বিরত থাকা জরুরি।”
(দারুল উলুম দেওবন্দ ফতোয়া বিভাগ)
মালিকি মাযহাব সম্মান ও সালামের ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়িকে অপছন্দ করে।
তারা বলে থাকেন: যে আচরণ নবী (সা.) ও সাহাবীরা করেননি, সেটি সম্মান দেখানোর নামে করা হলে তা বিদআতের শামিল হতে পারে।
পা ধরে সালাম করা নবী (সা.) বা সাহাবীদের আমল নয়।
শাফেয়ি মাযহাবেও অন্য ধর্ম বা জাতির অনুকরণ নিষিদ্ধ (تَشَبُّهُ).
ইসলামি রীতিতে সম্মান করার পদ্ধতি আছে — তা পা ধরার মতো হতে পারে না।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
“যা রাসূল (সা.) বা সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত নয়, তা অপ্রয়োজনীয় ভালোবাসা বা বাড়াবাড়ির মাধ্যমে করা ঠিক নয়।”
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মাযহাবেও নবী (সা.) এর সুন্নাহ অনুসরণ করাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তাদের মতে, এমন আচরণ (যেমন: পা ধরা) যদি অন্য ধর্মের নিদর্শন হয়, তাহলে তা হারাম।
এমনকি অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নামেও বিদআত হতে পারে।
চার মাযহাবেই “পা ধরে সালাম করা”কে অন্তত “অনুচিত” এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিদআত বা হারাম বলে গণ্য করা হয়েছে। ইসলামে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করার সুন্নাতি পদ্ধতি আছে — যেমন মুখে সালাম, দোয়া, সেবা ইত্যাদি। পা ধরা এসবের মধ্যে পড়ে না।